বিশেষ সংবাদদাতা,কলকাতা: পশ্চিমবাংলার সরকারের বিরুদ্ধে ফের বিস্ফোরক রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়। রীতিমতো তথ্য দিয়ে রাজ্যের কোন জেলায় কত ধর্ষণ, অপহরণের সংখ্যাই বা কত, সব তথ্য দিয়ে মঙ্গলবার তুলে ধরেন তিনি। অবশ্য রাজ্যপালের ওই তথ্য পেশের পর রাজ্য সরকার পরিষ্কার জানিয়ে দেয়, সমস্ত তথ্য ভ্রান্ত। ফলে বাংলায় নবান্ন বনাম রাজভবনের লড়াই অন্য মাত্রা পেয়ে গেল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
মঙ্গলবার দুপুরে টুইটারে তথ্য পেশ করে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় গত অগস্ট মাসে রাজ্যের কোথায় কত ধর্ষণ ও অপহরণের ঘটনা ঘটেছে, তার তথ্য ও পরিসংখ্যান পেশ করেন। শুধু তাই নয়, এই তথ্য টুইটারে পোস্ট করে তা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে ট্যাগও করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘এ বছর শুধু অগস্ট মাসেই রাজ্যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে ২২৩টি এবং অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৫৩৯টি। এই পরিসংখ্যানেই স্পষ্ট রাজ্যের আইন–শৃঙ্খলা কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে! আরও পরিষ্কার, রাজ্যে মহিলাদের ওপর অপরাধের সংখ্যা বেড়েই চলেছে।’ এর পরই রাজ্যপাল হিসেবে তিনি রাজ্য ও কলকাতা পুলিশকে কাঠগড়ায় দাঁড় করান। আইন–শৃঙ্খলা রক্ষায় আরও সতর্ক হতে এবং কড়া পদক্ষেপ করতে তাদের তিনি নির্দেশ দেন।
রাজ্যপালের এই তথ্য পেশের পরই রাজ্য জুড়ে বিভিন্ন মহলে শোরগোল পড়ে যায়। অনেকে যেমন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দাগতে শুরু করেন, তেমনই অনেকে রাজ্য সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল এমন তথ্য পেশ করতে পারেন কিনা, সেই রীতি রাজভবনের আছে কিনা, সেই প্রশ্নও তোলেন। এর পরই বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলে রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর। টুইট করে তারা জানায়, ‘রাজ্যে অপহরণ এবং ধর্ষণের ঘটনা নিয়ে রাজভবনের তরফে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে, তা কোনও সরকারি রিপোর্ট বা পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করে তৈরি হয়নি। তাই রাজ্যপালের অভিযোগগুলি ভিত্তিহীন এবং বিভ্রান্তিকর।’
রাজ্যপালের টুইট যে রাজ্য সরকারকে এদিন অস্বস্তিতে ফেলে তা যেমন সত্য, তেমনই স্বরাষ্ট্র দফতরের টুইটও রাজ্যপালকে যে খুশি করতে পারেনি, সে কথা অনস্বীকার্য। তাই তিনি ফের টুইট করে পরিষ্কার লেখেন, ‘আমার দেওয়া পরিসংখ্যানের জবাবে রাজ্য সরকার যে জবাব দিয়েছে, তাতে আমি স্তম্ভিত।’ এখানেই তিনি থেমে থাকেননি। রীতিমতো দাবি করেন, ‘আমি ধর্ষণ ও অপহরণ সংক্রান্ত —এইসব তথ্য পেয়েছি প্রতিটি জেলার পাঠানো সরকারি রিপোর্ট থেকে। আসলে এই তথ্য ও পরিসংখ্যান অস্বীকার করার জন্য ভুল স্বীকার করে রাজ্য সরকারের ক্ষমা চাওয়া উচিত।’
এর আগেও বিভিন্ন বিষয়ে রাজভবন ও নবান্নের সঙ্ঘাত হয়েছে। রাজ্যপাল রাজ্য সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তবে এ ভাবে তথ্য ও পরিসংখ্যান দিয়ে রাজ্যপাল যে ভাবে রাজ্য সরকারকে কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিয়েছেন, তা রীতিমতো তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে তথ্যাভিজ্ঞ মহল। এই তথ্য ও পরিসংখ্যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বিধানসভা নির্বাচনের আগে অস্বস্তিতে রাখবে বলে ধারণা তাদের।